বাংলাদেশ সংবিধানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ধারাসমূহ বর্ণনা কর

বাংলাদেশের সংবিধানের যেসব ধারায় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন অধিকারের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও


ভূমিকা: বাংলাদেশের সংবিধানে সংখ্যালঘু জনগণের বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে কয়েকটি ধারায় সরাসরি বা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ধারা নিশ্চিত করে যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের সাংবিধানিক অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, ভাষা, জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে। নীচে বাংলাদেশ সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা বর্ণনা করা হলো

বাংলাদেশ সংবিধানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ধারাসমূহ বর্ণনা কর

বাংলাদেশের সংবিধানের ধারায় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন অধিকার:

সরাসরি কোনো ধারায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষণের কথা না বলা হলেও অপ্রত্যক্ষভাবে যেসব ধারা দ্বারা অপ্রত্যক্ষভাবে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন অধিকারের স্বীকৃতি বাংলাদেশ সংবিধানে পাওয়া যায় তা হলো-


১. সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক সাংবিধানিক ধারা: সংবিধানের ২নং ধারা দ্বারা বোঝানো হয় কোন কোন পরিসরকে বাংলাদেশের সীমানাধীন হবে এই পরিসরের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশি বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানার অন্তর্ভুক্ত হবে-

(ক) ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যাবহিতি পূর্বে যে সকল এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল সংবিধান (তৃতীয় সংশোধন) আইন ১৯৭৪ এর অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলিয়া উল্লিখিত এলাকা, কিন্তু উক্ত আইনে বহির্ভুক্ত এলাকা বলিয়া উল্লিখিত এলাকা তসবহির্ভূত এবং

(খ) যে সকল এলাকা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সীমানাভুক হতে পারে।


২. রাষ্ট্রের সংবিধান বঙ্গ বিষয়ক কর্মকাণ্ড বিষয়ে ধারণা: ধারা ৮(খ) এই ধারা রাষ্ট্রদ্রোহিতা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে। যদি কোনো নাগরিক সংবিধান বা এর বিধানসমূহের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাসের বিপরীতে কাজ করে, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হবে। এখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় সরকার দায়বদ্ধ।

এই সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে বা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।

১। কোনো ব্যক্তি ২। দফায় বর্ণীত

(ক) কোনো কাজ করতে, সহযোগিতা বা উসকানি প্রদান করলে কিংবা।

(খ) কাজ অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন কালে কার্যত একইরূপ অপরাধ হবে।

২। এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত সত্তের মধ্যে সর্বোচ্চ দন্ডে দণ্ডিত হবে।


৩. উপজাতি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধিকার সমন্বয় বিষয়ক ধারাধারা ২৩ (ক) এই ধারা স্পষ্টভাবে বলে যে, রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উত্তরাধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, জাতিগত এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ভাষার সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করে।

ধারা ২৩ (ক) রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা করবেন।


৪. সংখ্যালঘু স্থাপনা সংরক্ষণের ধারা: ধারা ৪১(ক) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং উপসম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখবে। এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের অঙ্গীকার।


৫. সরকারি নিয়োগ লাভের সুযোগ বিধান: (ধারা ২৯) সরকারি কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমতা এবং বৈষম্যহীন অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে, ধর্ম, গোষ্ঠী, জাতি, বা লিঙ্গভিত্তিক কোনো বৈষম্য প্রবর্তন করা যাবে না। বিশেষভাবে সংখ্যালঘুদের জন্য উপযুক্ত পদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

১। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।

২। কেবল ধর্ম-গোষ্ঠী ও নারী-পুরুষভেদে না জন্মস্থানের কারণে প্রজাতন্ত্রের কোনো নাগরিক কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।

৩। এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই।

৪। নাগরিকদের যে-কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে। পারেন সেই উদ্দেশ্য তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হবে।

(খ) কোনো ধর্মীয় বা উপসম্প্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপসম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধানসংবলিত যে-কোনো আইন কার্যকর করা হবে।

(গ) যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী না পুরুষের পদে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেরূল যে-কোনো শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করা যাবে না।


৬. ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক সংবিধানের ধারা: (ধারা ৪১) প্রত্যেক নাগরিককে তার পছন্দমতো ধর্ম পালন, প্রচার বা পরিবর্তন করার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১। আইন বা প্রচারের ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে-কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার নীতিমালায় রয়েছে।

(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় অধিকার রয়েছে

২। কেনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ব্যক্তির নিজস্ব ধর্মসংক্রান্ত না হলে তাকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করতে হবে না।


৭. জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা বিষয়ক ধাক্কা: (ধারা ৩২) আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে জীবন বা ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং তাদের জীবনধারণের অধিকার রক্ষায় সহায়ক।


৮. অসমতা নিরোধক ধারা:

(ধারা ২৭) সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

(ধারা ২৮) ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ বা লিঙ্গভিত্তিক কোনো বৈষম্য করা যাবে না। এই ধারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

১। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদে জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।

২। রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরের নারী-পুরুষের সমানাধিকার লাভ করেন।

৩। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদের জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন ও বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিক কোনোরূপ অসমতা বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীনে করা যাবে না।

৪। নারী বা শিশুদের অনুকুলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হতে বই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংখ্যালঘু বিষয়ে তাদের বিভিন্ন অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আলাদা জরের ব্যবস্থা সৃষ্টি, পরিচালনা এবং তা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান এবং আইনি নীতিমালায় এসব ধরনের কোনো আলাদা স্তর Provision-এর উল্লেখ সংখ্যালয় শ্রেণির জন্য করা হয় নি।

No comments:

Post a Comment